ওমানের দিন গুলো
কামলা পারমিট করতে দিলাম ... 2 দিন পর আমি অফিসিয়াল বাংলাদেশি কামলা। যাউকগা, কাহিনি হইলা...
ইমিগ্রেশনে জিগাইল বিদেশ যাবা করবাডা কি?
আমি কইলাম অফিসের কামে।
কয় মানে কামলা দিবার? পার্মিট আছে?
আমি কই কিয়ের পার্মিট? আমি তো জব করি এইখানে, এক সফ্টওয়ার ফার্মে আছি।
তা করা হয় কি?
প্রোগ্রামার।
ও তারমানে তো কামলাই। পার্মিট লাগবই নাইলে নট যাওয়া যাওই। কামলা পার্মিট ছাড়া বিদেশে কামলা পইজলামো?
দেন কি আর করা আইজ চরকির মত এ অফিস সে অফিস ঘুইরা অফিসিায়াল কামলা পারমিটের এপ্লাই কইরা আসলাম ... 😕
September 23, 2013
আজকে ৫ম দিন মাস্কট এ। মানুষ চাইলেই কত কিছুই পারে না? একা একা চলে আসলাম। পারছিও থাকতে প্রবলেম তো হচ্ছে না। শুধু কাছের মানুষগুলারে দেখতে পারিনা এই যা। একটু একা লাগে করার তো কিছু নাই। যাইহোক মাস্কট শহর টা একটু কেমন যেন। যেদিকে তাকানো যায় ধুসর বাদামি পাহাড়। এর মধ্যে দিয়েই উচুনিচু রাস্তা। গাছপালা নেই বল্লেই চলে। রাস্তাগুলো সুন্দর পরিষ্কার একটু ধুলা নেই। রাস্তার পাশ দিয়ে সবুজ ঘাস, সেইপ করা গাছ। তবে একটু বেশি আর্টিফিসিয়াল লাগে। বাড়ি গুলো সুন্দর ছিম ছাম। সব সাদা অথবা অফ-হোয়াইট। চোখে লাগে। রাস্তায় সব দামী গাড়ি। কিন্তু মানুষ নেই। মানুষ তো দুরে একটা কুকুরও চোখে পড়েনা রাস্তায় হাটতে। দিনের বেলা না হয় গরম থাকে অনেক, আমি সন্ধায় বেরহইছি ঘুরতে কাক পক্ষিও থাকে না। মেইনরোডে গেলে শুধু চলন্ত গাড়ির দেখা পাওয়া যয়া। আমি আছি একটা পাহাড়ি টাইপের যায়গায়। আশেপাশে সুন্দর সুন্দর বাড়ি কিন্তু একটা দোকানও নাই। বাসায় খাবার দাবার পানি কিনে এনে জমা করে রাখা ছাড়া উপায় নাই। ৮-৫টা অফিস। তারপর বেকার বাসায় গিয়ে বেকার বসে থাকা। টিভ মুভি দেখে কোন মতে সময় পার করছি এই আরকি। মোটামুটি এইটাই আমার কারেন্ট স্ট্যাটাস।
October 2, 2013
১৫দিন!!! দেশে কত কি হয়ে যাচ্ছে আমি পড়ে আছি এই মরার দেশে। অলরেডি নস্টালজিক। কত দিন বাসায় যায় না, কতদিন সবাইকে দেখিনা, কতদিন আম্মুর রান্না খাই না, কতদিন বাংলায় কথা বলি না মন খুলে, কত দিন আড্ডা দিই না ইচ্ছা মত, কত দিন মোড়ের টংএ চা খাই না, কত দিন রিকসা চড়িনা, বৃষ্টিইইই … কতদিন বৃষ্টি দেখিনা, রাস্তা কাদা ধুলো মাটি জ্যাম গরম ঘাম সব মিস করছি আমি ... সব … আমি হয়ত একটু বেশিই দেশি বিদেশ আামার স্যুট করবে না যা বুঝছি।
ঈদে আমার বাড়ি যাওয়ার কথা ছিল কিন্তু আনফরচুনেটলি হইলনা। ডোন্ট নো হোয়াই বরাবরি আমার ফরচুন একটু বেশিই আন। যাই হোক কাহিনিটা বলি, ঈদের ছুটি হয়ে যাচ্ছে সব বন্দ থাকবে প্রায় ১০দিনের মত। বস ও দেশে চলে যাচ্ছে তো আমি বসরে বল্লাম, হেনরিক (আমার বসের নাম) আমিও যাবগা। এতদিন এইখানে বসে করব টা কি হ্যা? আর ঈদে যদি বাড়িতে করতে না পারলাম তাইলে আর কেমনে কি? তুমি বলছ দেখে আইছি এখন কেমনে কি করবা যানি না টিকিট কাট। আমিও ঘুরে আসি। আমার কথাবার্তা শুনে হেনরিক বুঝল বাংগালি তো খেপছে সো সে ঠান্ডা করার ব্যাবস্থা নিল। বলল কুল ম্যান কু্ল আমি দেখতেছি কি করা যায় বাট টিকিট ইস ভেরি সোনার হরিন নাউ। তারপরও আই উইল লেট ইউ আউট এনিহাউ ডোনট ওরি। আমি বললাম যাক। এর পর সে টিকিট কাটল ঠিক যাওয়ার আগের দিন। বেটা বড়ই আইলসা (আমার চেয়েও)। কাইটা দিয়া সেইদিনি সে গন।
আমি পরদিন মানে ১২তারিখ সব গোছগাছ করে এয়ারপোর্ট গেলাম ফ্লাইট রাত ১০টায়। সব ঠিকঠাক চেকইনের লাইনে দাড়াইলাম। আমার টাইম আসল পাসপোর্ট দিলাম চেকারের হাতে।
সে বলে ইউ আর রাহহমান নাবিঈদ।
আমি বল্লাম ইয়েস।
সে কয় ইউ কেন নত গো তুদে।
আমি কইলাম মারছে। ঝামেলা যে লাগবে যান্তাম তাইবলে এত তারাতারি? ঢোক গিলে জিগাইলাম হোয়াই?
বিকজ ইউ দোন্ত হেব ভিসা।
হালাই কয় কি? দেশে যইতেও ভিসা লাগব? আমি কইলাম ভাই আমি আমার দেশে যাইতেছি ভিসা কেন লাগব?
সে কয় আই ডোন্ত নো, লুক আই হেব এ মেইল ফ্রম এয়ারলাইন, হেয়ার ইজ ইউর নেম রামান নাবিদ, ইউ কেন নত গো।
আমি তো শ্যাষ। কইলাম দেন হোয়াট কেন আই দু সরি ডু নাউ?
সে কয় গো তু দেত কাউন্তার, ইয়েস দেড তল গাই, তক উইত হিম।
গেলাম সেই তল গাইয়ের কাছে। বল্লাম ভাই কি বিপদ এইডা আমার তো ওমানের ভিসা আছে বাংলাদেশের পাসপোর্ট আছে আর কি লাগব?
সে কয় বাট ডু ইউ হেব ইন্ডিয়ান ভিসা?
আমি মনে মনে কইলাম কি জালা আবার ইন্ডিা কইথেইকা আইলো রে বাপ? মুখে কইলাম নো বাট হোয়াই ইনডিা? আইম গোইং টু ঢাকা!
সে কয় তোমার টিকেট মাসকট-ত্রিভান্দাম-দিল্লি-ঢাকা। আমি বল্লাম হা জানি তো কি হইসে? সে কয় ত্রিভান্দাম-দিল্লি তো ইন্ডিয়ার ভিসা ছারা যাইতে পারবা না।
আমি বল্লাম আরে না পারলে টিকিট দিল কেমনে আজিব?
সে কয় যদি মাসকট-ত্রিভান্দাম-ঢাকা বা মাসকট-দিল্লি-ঢাকা হইলে প্রবলেম ছিল না। টিকিট কারছ কই থেকে? আমি কইলাম আমি তো কাটি নাই বস কাইটা দিছে। সে কয় তো বস কাটছে কেমনে? আমি কইলাম অনলাইনে মেবি। সে কয় হুম এইডাই প্রব হইসে এজপন্সিতে দিলে ওরা এমনে দিত না টিকিট। আমি কইলাম কোন ওয়ে নাই এখন? সে কয় না। তয় আমি টিকিট ক্যানসিল করে দিচ্ছি যাতে টাকা টা ফেরত পাওয়া যায়।
আমি ততক্ষনে মনে মনে বসেরে গালি দিয়া শুয়াই ফেলছি বেটা টিকিট কাটবি দেইখা কাটবি না হালার হেনরিকের …. থাক এইখানে না গালাই ওয়ালেরও তো আবার কান আছে। কইলাম ওকে করেন প্লিজ। মনে মনে কইলাম সালার টাকা টা গচ্চা গেলেই খুশি হইতাম। মাথায় আকাশ ভাইংগা পড়লে আসলে কি হয় বুঝলাম। আমার কাছে ফোন নাই। যারা এয়ার পোর্টএ নিয়ে আসছিল গেছেগা। ওমানি রিয়াল যা ছিল প্রায় খরচ করে ফেলছি সবই গিফ্টটিফ্ট কিনে। এখন কি করি? ডলার ভাঙাইলাম একবার মাথায় বু্দ্ধি আসল দেখি টিকেট কোন পাওয়া যায় কিনা। পাওয়া গেলে যাবগা নিজেই কাইটা। গেলাম একটা ট্রাভেল এজপন্সির বুথে। দেখলাম এক সুন্দরি বইসা আছে সহস কইরা জিগাইলাম ইয়ে এক্সকিউজমি, আজকে বা কালকে ঢাকার টিকেট আছে কিনা দেখবেন একটু প্লিজ। সে অনেক্ষন ধইরা কিবোর্ড গুতা গুতি কইরা জানাইল কালকে একটা হবে কিন্তু বাট ভেরি কস্টলি। আমি ঢোক গিলে জিগাইলাম ইয়ে…কত? সে কইল ২৭৯ রিয়াল বিজনেস ক্লাস। আমি মনে মনে ২০০ দিয়ে গুন দিয়া কনোমতে বললাম রিটান? সে কয় নো ওয়ান ওয়ে। আমি কইলাম ও। ওকে থ্যাঙ্কু। টিকিটের আশা বাদ দিলাম।
এয়ারপোর্ট থেকে বাইর হইলাম মনটা বিরাটই খারাপ। তার উপর চিন্তা এত রাইতে যাব কেমনে? তখনি একজন পাশ থেইকা জিগাইল ওয়ান্ত তেকসি? এক ওমানি ট্যাক্সি ড্রাইভার, আমি কইলাম হ আইমিন ইয়েস। সে কইল হয়ার? আমি কইলাম করাম। সে আবার জিগাইল হয়ার? আমি আবার কইলাম করাম? সে কয় ওওও… কোও(গলার মধ্যে)রাম। কোওরাম হয়ার? আমি কইলাম ব্যাটা তোর মাথায়। সে কয় হয়ার? আমি কইলাম আরে আমি চিনি, আই কেন সো ইউ। কয় ওকে ইউ মালুম। ইয়েস ইয়েস মালুম। ওকে কাম পিছে। বুঝলাম আমারে ইনডিয়ান ভাবছে। যাই হোক তার ট্যক্সিতে যাইয়া উঠলাম। দেখলাম সেইডা একটা লেক্সাস। আমি মনে মনে কইলাম হায়রে শালার কপাল ট্যাক্সিও বলে লেক্সাস। (ট্যাক্সি ভাড়া বাবদ ৭রিয়াল মানে প্রায় ১৫০০ টাকা দিতে হইছিল 🙁 )
যাই হোক ঈদ টা এইবার একাই করা লাগবে কি আর করা। আশেপাশের কিছু সাউথইন্ডিয়ানের সাথে পরিচয় হইছে ওরা বারবার আস্বাস দিছে, ডোন্ট্টা ওআড়ি…উই উইল ইনজয়। আমি খুব একটা ভরসা পইতেছি না। দেখা যাক কি হয়।
October 16, 2013
এইখানে আসার পর কয়দিনে ছেলেটার সাথে বেশ ভাল ভাব হইছে। নাম সৃজিত, সাউথ ইন্ডিয়ান। বেশ ভাল একটা ছেলে। পাশের বাসায় থাকে এর সাথেই রান্নাবান্না করে খাই। ওর বাসায় ইন্টারনেট লাইন থাকায় ওইখানেই থাকা হয় বেশি। ও না থাকলেও চাবি দিয়ে যায়। আমি একটু ঘর কুনো আছি প্রায়ই সে বিকাল হলে ঘুরতে বের হয় আমাকে নিয়ে এদিক সেদিক। কাছেই সাগর। ছোট্ট একটা সৈকত আছে ওইখানে যাই মাঝে মাঝে। প্রথম দিন গিয়ে আমার আনুভুতি ছ্যাহ এইডা কিছু হইল? এর চাইতে আমাদের গড়াই নদির বাধও ভাল। (আমার বিশ্বাস আমাদের কক্সবাজার দেখার পর দুনিয়ার আর কোন সমুদ্র সৈকতই ভালা লাগার কথা না কারোরই) আমার যেদিন ফিরে যাওয়ার কথা ছিল(পরে ক্যানসেল হয়) সৃজিত অমাকে বলল আমি পৌঁছে দিবো তোমাকে এয়ারপোর্ট। আমি বললাম আরে নাহ আমি একাই পারব। সে বলে নাহ তুমি দেখা যাবে উল্টা দিকে চলে গেছ। আমি কতক্ষণ হা করে তাকিয়ে থাকলাম। কারন এই কাজ টা যে আমি করতেই পারি আমার পরিচিত সবাই বিনা সন্দেহেই বলবে কিন্তু মাত্র ১৫ দিনের পরিচয়ে কেউ আমাকে এই কথা বলবে চিন্তাও করি নাই। যাইহোক আমার বন্ধু ভাগ্য বরাবরই ভাল। তবে এই দেশে এসে এমন কাউকে পাব চিন্তাও করিনাই। বন্ধুর কথা যখন বললামই আমার আরেক বন্ধুতো দেশে বসেও সারাক্ষণই সাথে থাকে। সব সময় অনলাইন থাকে যাতে আমি নক করলেই পাই। বাসায় 24x7 নিউজ আপডেটের মত আমার আপডেট দেয়, আর আমাকে বাসার নিউজ। অথচ বেচারী নিজেই অনেক ঝামেলায় আছে আমারই উল্টা থাকা দরকার ছিল। সরি রে দোস্ত Farzana Tinni। থ্যাংকস তো আর দিবি না দিতে। মাঝে মাঝে ভাবি আমি আতি তুচ্ছ একজন মানুষ কিন্তু আতি ভাগ্যবান। কারন যেখানেই যাই মানুষের ভালবাসা পাই আর যাইহোক।
Comments
Post a Comment