আপনারা যারা মুমিনুল গং এর সাথে ইসলামী বিপ্লব ঘটাতে চান …

আপনারা যারা মুমিনুল গং এর সাথে ইসলামী বিপ্লব ঘটাতে চান … 

অবশ্যই ইসলামী বিপ্লব একটা ব্যাপার বটে। তবে তার আগে নিজেদের অওকাদ কতটুকু সেইটাও একটু দেখে নিবেন। থামেন আগেই দা বটি নিয়ে ছুইটা আইসেন না। কোন দুঃখে এই কথা বলি সেইটাও একটু শুনেন। 

একটা প্রশ্ন করি মহানবীর হাতে মদিনায় ইসলাম প্রতিষ্ঠার পর এত দ্রুত কেন প্রায় অর্ধেক পৃথিবী ইসলামী শাসন ব্যবস্থার আন্ডারে চলে এলো? সেই শাসন ব্যবস্থা চললো প্রায় ১০০০ বছর। তার মানে নিশ্চয় কিছু একটা ছিল তাই না? যা মানুষ গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছিল। কি ছিল সেইটা? কারণ টা হলো, সেই সময় ইসলাম ছিল সেই যুগের তুলনায় অনেকটাই আধুনিক, অগ্রগামী। ইউরোপ যখন অন্ধকার যুগে আর এশিয়া যখন কুসংস্কারে নিমজ্জিত ইসলাম তখন আধুনিক সভ্যতা, শাসন ব্যবস্থা নিয়ে রাজ্যের পর রাজ্য জয় করে গেছে। সর্বশেষ যেই অটোমান আমলে ইসলাম সবচেয়ে বড় সাম্রাজ্যে পরিণত হয় তখনো ইউরোপ ধর্মান্ধ পোপ আর গির্জার প্রভাব থেকে বের হতে পারেনি। এই কথা গুলো বলার উদ্দেশ্য হচ্ছে স্পষ্টতই যখন ইসলাম পৃথিবী শাসন করছে তখন তারাই ছিল সেই সময়ের সবচেয়ে আধুনিক সম্প্রদায়। জ্ঞান বিজ্ঞান থেকে শুরু করে রাষ্ট্র কিংবা সামরিক বিদ্যা, ইতিহাস, সাহিত্য, দর্শন, জ্যোতির্বিদ্যা, চিকিৎসা এমনকি গণিত সব দিকেই তারা এগিয়ে ছিল বাকি বিশ্বের চেয়ে। এইসব বিষয়ের উপর ইংরেজিতে যেই আদি বই গুলো পাওয়া যায় তার বেশিরভাগই আরবি থেকে সরাসরি অনুবাদ (এমনকি গ্রিক এরিস্টটল কিংবা প্লেটোর ফিলোসফির যেসব বই আমরা দেখি তার মধ্যেও অনেকই সেই সময় আরবিতে অনুবাদ হয়ে পরে ইংরেজিতে এসেছে)। তারমানে সেই সময় ইসলাম সভ্যতা এমনি এমনি বিশ্ব জয় করে নি। এর পেছনে ছিল তাদের সময়ের চেয়ে অগ্রগামিতা। 

এখন আপনিই প্রশ্ন করেন আপনাদের কি অবস্থা? আপনাদের তথা কথিত নেতাদের কি অবস্থা? শুধু কোরআন আর সিয়াহ-সিত্তাহ পড়েই ইসলামী বিপ্লব করে ফেলা যায় না এই সত্য তাদের কে বোঝাবে? অপরিপক্ক বিপ্লব এর পরিণতি আরব বসন্তের পর সিরিয়া মিসর দেখছে। বেশি না গত ৫০০ বছরে পৃথিবীর কি পরিমান অগ্রগতি হয়েছে, তার সাথে নিজেদের একাত্ম করতে না পারলে গাল গপ্পো করে শুধু ওয়াজের মাঠ গরম করা গেলেও কাজের কাজ কিছু হবে না। এই বিষয় টা মাথায় না ঢুকলে পটাপট শহীদ হয়েও (এইটাই সবচাইতে সহজ) যে লাভের গুড় কারা খাবে সেই উদহারণটাও সামনেই আছে। দেখতে না পেলে কিছু করার নাই। 

যাদের মোটামুটি বিজ্ঞান বা গণিত নিয়ে একটু আইডিয়া তারা জানেন কম্পিউটার আসার আগে প্রযুক্তি বলতে আসলে গণিত কেই বোঝানো হতো। গণিতের এক একটা নতুন বিষয় কেউ না কেউ আবিষ্কার  করেছে অমনি মানব সভ্যতা একটু করে এগিয়ে গেছে। গণিতের অগ্রগতির পেছনে সবচেয়ে গুরত্ত্বপূর্ন বিষয় গুলো যেমন নাম্বারথিওরি থেকে শুরু করে এলজেব্রা, এলগোরিদম এর ধারণা কিংবা নিউটনের ক্যালকুলাস এর প্রাথমিক ধারণাও গুলোও আসছে ৯০০/১০০০ শতাব্দীর বিভিন্ন মুসলিম গণিতবিদদের হাত ধরে অথবা সেই সময়ে মুসলিমদেরই সংকলন সংরক্ষণের ফলে। তারমানে সেই যুগে সবচেয়ে বড় প্রযুক্তিই ছিল মুসলিমদের হাতে। পরবর্তীতে মুসলমানের হাত হয়েই গেছে ইংরেজদের হাতে। সেখান থেকেই ধাপে ধাপে আজকের কম্পিউটার ইন্টারনেট আর তথ্য প্রযুক্তি। এখন বলেন আজকের তথ্য প্রযুক্তির সাথে মুকাবিলা-আল-জবর এর কতটা পার্থক্য। আপনারা যদি এখনো সেই জায়গাতেই আটকে থাকেন তাইলে আপনাদের নেতৃত্ব কে গ্রহণ করবে? সেই জায়গাতে আটকে থাকলেও একটা কথা ছিল আফসোস সেইটাও এই মোল্লাদের নেই। এরা ভাবে এরাই সহি মুসলিম, মাদ্রাসায় না পড়লেতো তো তারা হাফ কাফির। এভাবে এরা নিজেরাই বিভক্তি তৈরী করে বসে আছে। এই মোল্লারা বর্তমান জ্ঞান বিজ্ঞান আধুনিকতাকে কে দুনিয়াবী ব্যাপার অথবা ইহুদি-খ্রিস্টানের বানানো বলে মুখ ফিরিয়ে নিবে আর “এইসব ইডিট করা যায়” বলেই ইসলাম কায়েমের স্বপ্ন দেখবে। নেতৃত্ব দিতে হলে সবার সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে হয়। আপনি সবার পেছনে দাঁড়ায় যদি বলেন আমার পেছেন আইসা দাড়াও আমি নেতৃত্ব দিবো তাইলে আসলে দিন শেষে কাউরেই পাবেন না (আশেপাশের কয়টা ৩নং বাচ্চা লাফাইবো ঠিক এতে খুশি থাকলে থাকতে পারেন কিন্তু বিপ্লব বহু দূর কি বাত)। তাই আগে অওকাদ অর্জন করেন তারপর ইসলামী বিপ্লব কইরেন, তা না হইলে বিপ্লবের আগে কিয়ামত চইলা আসবে।



Comments

Popular posts from this blog

সুর গহীনে

স্বপ্নবতা

যখন আমি অ্যডিক্টেড ছিলাম!